দ্রুত ডায়াগনসিসের মাধ্যমে ক্যানসারের সমাধান আসতে পারে। ডায়াগনসিস হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে মাইক্রো অথবা ন্যানো স্কেলের ডিভাইস ও চিপ ব্যবহার করে ঘরে বা কর্মক্ষেত্রে বসে স্বল্প খরচে রোগনির্ণয় করা যাবে বলে জানিয়েছেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ অফিস কক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) ড. গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস সময় সংবাদকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্টিং বা ডায়াগনসিসের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও বর্তমানে তার তত্ত্বাবধানে মাইক্রোফ্লুইডিকভিত্তিক পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্টিং নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালু হয়েছে। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যানবেইজের গবেষণা অনুদানের মাধ্যমে ক্যানসার এবং সংক্রামক ব্যাধির জন্য পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্টিং বা ডায়াগনসিস সিস্টেম ডেভেলপ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অধ্যাপক ড. অধ্যাপক ড. গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, যেমন দুটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে- আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই ডায়াবেটিস টেস্ট করার জন্য গ্লুকোমিটার এবং চিপ ব্যবহার করা হয়; অপরদিকে প্রেগনেন্সি টেস্ট স্ট্রিট ব্যবহার করে গর্ভধারণের পজিটিভ অথবা নেগেটিভ রেজাল্ট নির্ণয় করা হয়। এ দুক্ষেত্রেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না বরং মানুষ ঘরে বসেই তাদের প্রয়োজন সম্পাদন করতে পারেন।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধিকে লক্ষ্য করে প্রচুর পরিমাণে পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্টিং এর গবেষণা চলছে। এই টেস্টগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো অনেক বেশি লাভবান হতে পারে। কারণ রোগীকে ডাক্তারের শরণাপন্ন কম হতে হয় এবং ক্লিনিক বা হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এতে করে অর্থ ও সময় দু’দিক থেকেই লাভবান হওয়া যায়।
ড. গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সম্প্রতি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তকরণকে ধরা যাক। বিশ্ব যখন ঝুঁকেছে করোনা ভাইরাসের জেনোম সিকুয়েন্সিং করার জন্য; যাতে করে সুনির্দিষ্টভাবে করোনা শনাক্ত করা যায়। তবে ল্যাটেরাল ফ্লো স্ট্রিপভিত্তিক অ্যান্টিবডি টেস্ট বাজারে চলে এসেছে; যদিও এটা কনফার্মেটরি টেস্ট নয় তারপরও এ ধরনের টেস্ট অনেক উপকারী। কারণ ঘরে বসেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। অপরদিকে কিছু দিন পর, এই ল্যাটেরাল ফ্লো স্ট্রিপ বা বিভিন্ন চিপভিত্তিক নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্ট বা কনফার্মেটরি টেস্টও বাজারে এসেছে।
এই ধরনের ডিভাইস বা রোগনির্ণয় পদ্ধতি মূলত নির্ভর করে মাইক্রোফ্লুইডিক টেকনোলজির ওপর জানিয়ে অধ্যাপক গোকুল চন্দ্র বলেন, মাইক্রোফ্লুইডিক টেকনোলজি হলো মাইক্রো লিটার আয়তনের সলিউশন বা রিএজেন্ট নিয়ে চিপের মধ্যে অল্প পরিমাণ বস্তু যেমন প্রোটিন বা ডিএনএ/আরএনএ বা অন্য কোনো রাসায়নিকদ্রব্য নির্ণয় করা হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের রিসার্চ বা গবেষণার তেমন প্রচলন নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের তেমন কোনো গ্রুপ এখনো এ ধরনের টেকনোলজি নিয়ে কাজ করে তেমন সুফল পাননি। এর কারণ এই গবেষণার জন্য চিপ তৈরি বা প্রাথমিক দ্রব্যাদি প্রচুর অর্থনৈতিক সাহায্য দরকার। প্রচণ্ড আগ্রহের কারণে তিনি স্বল্প বাজেটের প্রজেক্টের মাধ্যমে এই গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন। রাসায়নিক দ্রব্যাদির প্রতুলতা সাপেক্ষে এবং নিরলস কাজ করে যেতে পারলে আগামী বছরের মধ্যে ঘরে বসে মাইক্রোফ্লুইডিক ডিভাইস বা চিপ এবং ল্যাটারাল ফ্লো স্ট্রিপ এর মাধ্যমে ক্যানসার অথবা সংক্রামক ব্যাধি শনাক্ত করণের গবেষণা সম্পন্ন হবে। এ ছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় একই সঙ্গে চার ধরনের ক্যানসারের প্রাথমিক শনাক্তকরণ সম্ভব হতে পারে। তার ওপরে চেষ্টা করা হবে যাতে করে একই টেস্টের মাধ্যমে ক্যানসারের স্টেজ বলা যায়। অর্থাৎ কোন ধরনের ক্যানসার সেটা নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
অধ্যাপক গোকুল চন্দ্র বলেন, প্রথমে খালি চোখে ক্যান্সার শনাক্তকরণের চেষ্টা করা হবে অর্থাৎ কলোরিমেট্রিক বা ফ্লুরোসেন্সভিত্তিক বায়োসেন্সিং সিস্টেম ডেভেলপ করা হবে। পরবর্তীতে ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল ডিটেকশন সিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করা হবে যাতে করে নিখুঁতভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রোগনির্ণয় সম্ভব হয়।