ভেঙে ফেলা হচ্ছে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও খুনি এরশাদ শিকদারের সেই বহুল আলোচিত বাড়ি ‘স্বর্ণকমল’। অংশীদার জটিলতা নিরসনের জন্য বাড়িটি তার উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত সন্তানরা ভেঙে ফেলছেন। তবে বিলাসবহুল দোতলা বাড়ির পুরোটা নয়, ভাঙা হচ্ছে অর্ধেক অংশের মতো। ভেঙে ফেলা বাড়ির স্থানে ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তার সন্তানদের।
এরশাদ শিকদারের এই বাড়ি নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার ১৩৫ নম্বর মজিদ সরণির স্বর্ণকমল বাড়ির সামনে উৎসুক মানুষ দাঁড়িয়ে বাড়িটি ভাঙার কার্যক্রম দেখছেন। বাড়ির মূল গেট ও পকেট গেটে বড় তালা ঝুলছে। কেউ প্রবেশ করতে চাইলেও প্রবেশ করতে পারছে না। গণমাধ্যম কর্মীদেরও প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে।
মজিদ সরণিতে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ১০ কাঠা জমির ওপর একটি পুরনো তিনতলা এবং আরেকটি দোতলা বাড়ি ছিল। দোতলা ভবনটির নামই মূলত ‘স্বর্ণকমল’। কয়েকদিন আগে তারা পুরনো তিনতলা ভবনটি শ্রমিক দিয়ে ভেঙে ফেলেছেন। এখন দোতলা ভবনটির অর্ধেকের মতো অংশ ভাঙা হচ্ছে।
তবে বাইরে থেকে দেখা যায়, মূল ভবনের ছাদে বড় হাতুড়ি ও ড্রিল মেশিনসহ যন্ত্রপাতি দিয়ে ভবন ভাঙার কাজ করছেন চার শ্রমিক। দোতলার মূল ভবনের সামনে ছোট্ট যে পুরনো তিনতলা ভবন ছিল, সেটি আগেই পুরোপুরি ভাঙা হয়ে গেছে। সেই স্থানে পড়ে আছে ইটসহ ভাঙা ভবনের কিছু অংশ।
এ বিষয় এরশাদ শিকদারের মেজো ছেলে কামাল শিকদার জানান, ‘১০ কাঠা জমির মধ্যে ৫ কাঠা জমি তার বাবা এরশাদ শিকদারের নামে এবং ৫ কাঠা তার মা খোদেজা বেগমের নামে। তার মায়ের নামে যে অংশ মূলত সেই অংশের স্থাপনা অপসারণ করা হচ্ছে। ওই ৫ কাঠা জমির ওপর ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’
এরশাদ শিকদার জীবিত থাকাকালে বিলাসবহুল ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর ‘স্বর্ণকমল’ তৈরি করেছিলেন। বাড়ির ভেতর পেঁচানো সিঁড়ি দিয়ে উঠে যেতে হয় দোতলায়। পেছনেও রয়েছে একটি সিঁড়ি। বাড়ির প্রত্যেকটি ঘর তখন সাজানো হয়েছিল দামি সব আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও শোপিস দিয়ে। এ বাড়িতে এরশাদ শিকদারের প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানরা বসবাস করতেন। আর দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা নাহার শোভা তার সন্তানদের নিয়ে অন্যত্র থাকেন।
এরশাদ শিকদার বাড়িটির নকশা তৈরি করে এনেছিলেন ভারত থেকে। এরশাদ শিকদার গ্রেফতার হওয়ার পর ওই বাড়ি থেকে পুলিশ একাধিক অস্ত্র উদ্ধার করেছিল।
২০০৪ সালের ১০ মে হত্যা মামলায় খুলনা জেলা কারাগারে দেশজুড়ে আলোচিত এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক হত্যা, অসংখ্য ধর্ষণ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা ছিল।