বিএনপি এককভাবে আন্দোলন করে আসলেও এবার সমমনা সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরই শিগগিরই আসবে সরকার পতনের নতুন কর্মসূচি। সরকারের ওপর চাপ তৈরির জন্য বিভিন্ন উপায় নিয়েও ভাবা হচ্ছে। এমনটা জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। সম্প্রতি সময় সংবাদকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি এ নেতা বলেন, চলতি মাসের এ ১১ তারিখ থেকে আমাদের আন্দোলনের গতি বা গতিবেগ দিন দিন বাড়ানো হবে। ওখান থেকে নতুন কর্মসূচি আসবে। সেগুলো কিন্তু মানে এত আস্তে আস্তে হবে না। সুতরাং আমি মনে করি, আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রাস্তায় আছি। আর ভবিষ্যতে গতিবেগ বাড়ানোর জন্য আমরা আমাদের গতিবেগ বাড়ানোর জন্য নতুন কর্মসূচি দেব। সবার পরামর্শ নেয়ার পর আমরা নিজেরা বসব। নিজেরা বসে কোনটা করা যাবে, কোনটা করা যাবে না, কেন করা যাবে, কেন করা যাবে না এগুলো সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ করার পর আমরা বলতে পারব। আমি মনে করি না আন্দোলন স্তিমিত হবে বরং আন্দোলনের গতি দিন দিন বাড়বে। শিগগিরই আসবে সরকার পতনের নতুন কর্মসূচি।
তিনি আরও বলেন, সরকারের প্রতি চাপ তৈরির জন্য বিভিন্ন উপায় নিয়েও ভাবা হচ্ছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যে কাজ, সে জন্য প্রথমেই দরকার এ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা। দ্বিতীয় হলো পদত্যাগের পর একটা নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা, যে সরকার সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সরকার যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করে তাহলে পদত্যাগ করোনার জন্য আন্দোলনের যে মাত্রা দরকার, আন্দোলনের যে গতি দরকার, সেটাই করা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা ওই আন্দোলন করব যে আন্দোলনে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়।
এদিকে গ্রেফতার এড়ানোর পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের মুক্তির জন্যও নতুন কৌশলে মাঠে থাকার কথা জানান বিএনপির আরেক নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। সাময়িকভাবে আন্দোলনের গতি কিছুটা ধীরে চললেও সামনের দিনে তা বাড়বে। সরকার পতনের জন্য যে ধরনের কর্মসূচি প্রয়োজন, তা আসবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
মঈন খান বলেন, অনেকে মনে করতে পারেন বাংলাদেশের উত্তাল পরিবেশে হইচই, লম্ফঝম্ফ নেই। সেটা আপনারা একটু কম দেখছেন। তার মানে এই নয় যে, আমরা কিন্তু বসে আছি, না আমরা বসে নেই। আরও অধিক সতর্ক হতে হচ্ছে আমাদের, যাতে মানুষ কোনোভাবে বিপরীত দিকে না যায়, শান্তির পথ থেকে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পথ থেকে তারা যেন বিচ্যুত না হয়। আমাদের বিশেষভাবে এদিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে। এ জন্য অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমাদের কর্মসূচিগুলো দিতে হচ্ছে।
নির্বাচন নিয়ে ড. আবদুল মঈন খান আরও বলেন, এ সরকারের অধীনে নির্বাচন বা এ ধরনের কোনো নির্বাচনের নাটকে আমরা অংশগ্রহণ করব না, এটা তো আমরা স্পষ্ট বলে দিয়েছি। পৃথিবীর কোনো সূর্য কিন্তু আজকে বিচ্ছিন্ন নয়, সারা বিশ্বের অংশ। যাক আজকে বাংলাদেশে কী ঘটছে, না ঘটছে, বাংলাদেশ সরকার মনে করতে পারে, আমরা বাংলাদেশের ভেতরে বসে যা খুশি তাই করব। কিন্তু এটা নিয়ে অন্য কেউ ভাববে না, চিন্তা করবে না, কেউ মনোযোগী হবে না, সেটা কিন্তু নাও হতে পারে। সেটা না হওয়ার যে সিগন্যাল, সেই সিগন্যালগুলো কিন্তু আমরা এরই মধ্যে পেয়ে গিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে এবং এ পরিস্থিতি কিন্তু ভালোর দিকে যাবে না, খারাপের দিকে যাবে।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে টানা কয়েক মাস মাঠের কর্মসূচি পালন করলেও দাবি আদায়ের প্রেক্ষাপট কতটা তৈরি করতে পেরেছে বিএনপি? রাজনীতির মাঠে চলছে সেই আলোচনা। এরই মধ্যে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিলের মধ্য দিয়ে মাঠে গড়ায় সমমনা জোট এবং দল নিয়ে তাদেরর যুগপৎ আন্দোলন। তবে জেলা, উপজেলা এমনকি বিভাগীয় গণসমাবেশের বিরতিহীন কর্মসূচির পর এখন মাঠের আন্দোলনে কিছুটা ভাটা তাদের।
এ নিয়ে নেতারা বলছেন, এখন নিজেদের ঘর এবং জোট গোছাতে ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। এ ছাড়া ভাবনা চলছে আন্দোলনের নতুন কৌশল প্রণয়ন নিয়েও।