শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি।।
বগুড়ার শেরপুরে পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে চার গ্রামবাসী। বুধবার বেলা সাড়ে বারোটায় উপজেলা ভবানীপুর ইউনিয়নের আম্বইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে এই ইউনিয়নের আম্বইল, গোড়তা, বালেন্দা ও ভাদড়া গ্রামের অন্তত শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়।
সাংবাদ সম্মেলনে আম্বইল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সোলাইমান আলী লিখত বক্তব্য পাঠ করেন।
সাংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, স্থানীয় ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকেরা বিগত পাঁচ বছর ধরে এই চার গ্রামের অন্তত অর্ধশতাধিক পরিবারের প্রায় ১শ বিঘা তিন ফসলী জমি জোরপূর্বক দখল করেছে। দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে তাদের প্রাণ নাশের হুমকী দেখায়। তাই প্রকৃত মালিকেরা জমিতে যেতে পারছে না। সম্পদ ও জীবন রাক্ষার দাবিতে ইতিপূর্বে তারা বগুড়া জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, শেরপুর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। কিন্তু কোন প্রতিকার না পেয়ে তারা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন।
আম্বইল গ্রামের নাজমুল হক বলেন, “ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীরা আমার ২৫ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করেছে। শুদু তাই নয়, আমাকে প্রাণ নাষেরও হুমকী দিচ্ছে।“ একই গ্রামের আরেক কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, “প্রায় দেড় মাস আগে আমি পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধানের বীজ বপন করেছিলাম। সেই জমিটিও কিছুদিন আগে স্থানীয় ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী পরিবারগুলো দখল করে নিয়েছে।“
আম্বইল গ্রামের গ্রামের জসিম উদ্দিন, বালেন্দা গ্রামের সাহেব আলীসহ উপস্থিত ওই চার গ্রামের ১৫ জন কৃষকেরা বলেন, তারা জমি উদ্ধারের জন্য আদালতে ১৩টি মামলা দায়ের করেছেন। তারপরও দখলবাজদের এভাবে জমি দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। গত এক মাসে তাদের আরও ১২ বিঘা জমি বেদখল হয়ে গেছে।
ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলের কথা অস্বীকার করে ভবানীপুর ইউনিয়নের গোড়তা গ্রামের ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী নেতা কমল সিং বলেন, “এই অঞ্চলে প্রায় ১ হাজার আদীবাসী পরিবার বৃটিশ আমল থেকে বসবাস করে আসছে। সিএস খতিয়ানে তাদের নাম রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় জোতদাররা আদিবাসীদের জমি দখল করে ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে মালিকানা দাবি করছে। তারা বিভিন্ন কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে কৃষি জমি নষ্ট করছে। তাই আমরা আমাদের জমি দখলে নিয়েছি।“
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি সন্তোষ সিং দাবি করেন, “আইএলও কনভেশন অনুযায়ি দখলীয় সরকারি খাস কৃষি জমিতে আদিবাসীদের অধিকার রয়েছে। তাই আমরা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল করি নাই। নিজেদের সম্পত্তি দখলে নিয়েছি মাত্র।“
এ প্রসঙ্গ নিয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা সুলতানা বলেন, “এই বিষয়ে স্থানীয় কিছু কৃষকের অভিযোগ পেয়েছি। কাগজপত্র দেখে জটিলতা নিরসনের চেষ্টা চলছে।“