বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা রাজধানীর ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ৮টার দিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। নেতাকর্মীদের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘ এ পথচলায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ সংগঠনটি।
এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অনাবাদি জমিতে শাকসবজি-ফল চাষ, মাছ ও গৃহপালিত পশুপালনের উদ্যোগসহ বছরব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বছরব্যাপি এ কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ।
১৯৪৮ সালের আজকের এদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের বৃহৎ এ ছাত্র সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছর রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে নামেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন ও এগারো দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বইয়ের সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী এ সংগঠনের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয় ও গৌরবোজ্জ্বল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেন, ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার পরিকল্পিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ নেতৃত্ব দেবে ছাত্রলীগ, ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে এটিই আমাদের সংকল্প।
কর্মসূচির বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন জানান, বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় ধানমন্ডিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, সাড়ে ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন এবং বিকেল ৩টায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
অন্যান্য বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনই শোভাযাত্রা বের করে ছাত্রলীগ। তবে এবার ৬ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা। সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ সমুন্নত রাখা, ঢাকা শহরের জ্যাম, শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা এবং গণজীবনের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে আমরা আমাদের র্যালিটি শুক্রবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া ৫-৮ জানুয়ারি রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও সংগৃহীত রক্ত বিতরণ আর শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
কর্মসূচি: দেশের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অনাবাদি জমিতে শাক-সবজি-ফল চাষ, গৃহপালিত পশুপালন ও পুকুরে মাছ চাষ ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ করা, প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ’ শীর্ষক মতবিনিময়, কনসার্ট ফর স্মার্ট বাংলাদেশ আয়োজন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুনর্মিলনী, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ : গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫ বছর’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, স্মার্ট বাংলাদেশ আইডিয়া কনটেস্ট, সব সাংগঠনিক ইউনিটের দলীয় কার্যালয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতা এবং জাতীয়ভাবে স্মার্ট ইয়ুথ ক্যাম্প আয়োজন। এছাড়াও রয়েছে শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে ২ মিনিটের শর্ট ফিল্ম প্রতিযোগিতার আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘ডেভেলপমেন্ট কুইজ’ আয়োজন, নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও শেখ হাসিনা’ শীর্ষক বক্তব্য প্রতিযোগিতা, ‘সজীব ওয়াজেদ জয় প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট’, স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট ক্যাম্পাসের ওপর আন্তর্জাতিক একাডেমিক কনফারেন্স, স্মার্ট বাংলাদেশ অলিম্পিয়াড, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরস্কারপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চা-চক্র এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : আওয়ার কান্ট্রি, আওয়ার ড্রিম’ শীর্ষক পোস্টার প্রেজেন্টেশন কর্মসূচি।
বছরব্যাপী এসব কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনে প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটকে নির্দেশনা এবং ছাত্রসমাজকে নিজেদের মেধার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি।
সংগঠনকে গতিশীল করতে কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান বলেন, ছাত্রলীগ সংগঠনের গঠনতান্ত্রিক নিয়মে চলবে, গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ করা যাবে না, মুজিব আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য এবং শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ করার জন্য শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, আমাদের অনেক সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি নেই; প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর এসব কমিটি করার উদ্যোগ নিতে হবে।