সব আলো নিভে গেছে। ভেতরে ভেতরে ডুকরে কাঁদছে পুরো ব্রাজিল। মহানায়ককে শেষ বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতাও শুরু হয়ে গেছে। কোটি কোটি ফুটবল সমর্থকের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা নিয়ে মহাপ্রয়াণের দিকে ছুটছেন এডসন আরান্তেস দো নাসিমান্তো।
কোথায় সমাহিত হবেন পেলে ? তার মৃত্যুর মতোই বড় সংবাদ এটাও। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের রীতি মেনেই কবর দেয়া হবে ও রেই’কে। তবে বিশেষত্বের জন্য সবার আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে এখন সেই কবরস্থান, যেখানে অনন্তকালের জন্য নিদ্রায় যাবেন ফুটবল সম্রাট।
সান্তোসের মাঠ থেকে কেবল সাড়ে আটশ মিটার দূরের মেমোরিয়াল নেকরোপোল একিউমেনিকায় সমাহিত হবেন রাজা। যে মাঠে কেটেছে তার পুরোটা জীবন, তাকে দৃষ্টিগোচরে রাখতেই এতো আয়োজন। তবে, গিনেস বুকের রেকর্ডধারী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভার্টিক্যাল এই গ্রেভইয়ার্ডে নিজেই জায়গা কিনে রেখেছিলেন পেলে। ভবনটি ১৪ তলা হলেও এর উচ্চতা ৩২ তলার সমান। এই ভবনের নবম তলায় থাকবেন পেলে।
শেষকৃত্য সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও সমাহিত করার সময় থাকতে পারবেন শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য এবং আমন্ত্রিত অতিথিরাই।
সিমেট্রি বলতে সাধারণত আমরা সবুজ গালিচায় মোড়ানো আঙিনার কথা ভাবলেও, নেকরোপোল একোমেনিকা তার চেয়ে ভিন্ন। বাইরে থেকে এটাকে ভবন ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। তবে, ১৯৮৩ সালে স্থাপিত এই কবর ভবনে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, মিউজিয়াম। একসঙ্গে ১৪ হাজার মানুষকে সমাহিত করা সম্ভব এই সিমেট্রিতে।
সান্তোস তার আঁতুড়ঘর। তাই এখানেই তিনি থাকবেন এটাই যেন নিয়তি। তাই তো ২০০৩ সালে নিজের কবরের জন্য এখানে জায়গা কিনেছিলেন পেলে। জন্মদাতা পিতা ডডিনহোর জার্সি নাম্বার ছিলো নয়, তাই বাবাকে স্মৃতিতে ধরে রাখতেই ১৪ তলা ভবনের নবম তলায় নিজের জায়গাটা নির্ধারণ করেছিলেন জাদুকর। ছেলের অভিনব এ ভালোবাসার চিহ্ন দেখে যেতে পারেননি বাবা। তবে, শতবর্ষী মা’কে ঠিকই জানিয়ে রেখেছিলেন পেলে।
তাহলে নিশ্চয়ই এখন মাথায় প্রশ্ন আসছে, এখানকার কবরের জায়গার মূল্য কত ? সাধারণভাবে যদি কেউ কেনেন, তাহলে তাকে খরচ করতে হবে ৬ থেকে ২০ হাজার ডলার। যার মেয়াদ সাকুল্যে তিন বছর। আর পুরো পরিবারের জন্য কোন প্যাকেজ নিলে সেখানে খরচ করতে হবে ৫০ হাজার ডলার।
তবে, সর্বকালের সেরা ফুটবলারের কবরের জায়গার নেই কোনো মেয়াদকাল। আজীবন পেলেকে একইভাবে রেখে দেয়া হবে নেকরোপোল একিউমেনিকার নবম তলায়।