আমদানি নীতি আদেশের পাশ কাটিয়েই এলসি খোলার আগেই জাপান থেকে আসা শতাধিক গাড়ি বন্দর থেকে খালাস করা হচ্ছে। শুল্ক বিশেষজ্ঞরা এমন দাবি করলেও আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকনডিশনড ভেহিকেলস ইমপোর্টারস অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) দাবি, সবকিছুই নিয়ম মেনে হচ্ছে।
গত ২২ নভেম্বর এক জাহাজে জাপান থেকে নতুন পুরাতন মিলে মোট ৮৫৬টি গাড়ি দেশে আসে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে যখন কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক, ঠিক তখন জানা যায়, ওই চালানে আসা ১০০টিরও বেশি গাড়ির বিপরীতে কোনো ঋণপত্র বা এলসি খোলাই হয়নি।
তবে নতুন খবর, এরই মধ্যে এলসি জটিলতা প্রায় কেটে গেছে। একই সঙ্গে বন্দর থেকে গাড়ি খালাস প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আর নিয়ম মেনেই এসব হচ্ছে বলে দাবি করেন বারভিডার সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন।
তিনি বলেন, কাস্টমস যদি এলসি না পায়, তাহলে তারা সে পণ্যটির রাজস্বও নেবে না, আবার ছাড়ও দেবে না। কোনো পণ্যের যদি জাহাজীকরণের সঙ্গে এলসির তারিখের কোনো অমিল দেখা দেয়, তখন একটি প্রতীকী জরিমানা করে সেসব পণ্য ছাড় করা হয়। গাড়িগুলোর ক্ষেত্রেও তাই করা হচ্ছে। আশা করি, এসব গাড়িও জরিমানা ও রাজস্ব দিয়ে বেরিয়ে যাবে।
তবে গাড়ির আমদানি কিংবা খালাস কার্যক্রম সবই কি নিয়ম মেনে হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমন অ্যান্ড ভ্যাটের সাবেক কমিশনার মো. আবদুল কাফী বলেন, এটি আইনকে পাশ কাটিয়ে করা হচ্ছে।
আমদানি নীতি আদেশের অনুচ্ছেদ ৮ এর উপ-অনুচ্ছেদ ২-এ বলা হয়েছে, গাড়ি আমদানিতে আগে অবশ্যই এলসি খুলতে হবে, যা এসব গাড়ির ক্ষেত্রে স্পষ্টতই মানা হয়নি।
একই অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ ৪-এ বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিপি বা ক্লিয়ারেন্স পারমিট নিয়ে জরিমানা দিয়ে খালাস করা যাবে।
জানা গেছে, জরিমানা দিয়েই এসব গাড়ি ছাড় করা হচ্ছে, তবে এ ক্ষেত্রে কোনো সিপি নেয়া হয়নি। আর এখানেই আরেক দফায় আমদানি নীতি আদেশের লঙ্ঘন দেখছেন শুল্ক বিশেষজ্ঞরা। যদিও এমন অনিয়ম আগেও হয়েছে; তবে এবারই প্রথমবারের মতো তা এত বড় পরিসরে হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমন অ্যান্ড ভ্যাটের সাবেক কমিশনার মো. আবদুল কাফী বলেন, এটি একেবারেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া না। জরিমানা করে গাড়ি ছাড়করণ প্রক্রিয়া তো মাঝেমধ্যে কিছুসংখ্যক গাড়ির ক্ষেত্রে করা হয়। তাই বলে এতসংখ্যক গাড়ির ক্ষেত্রে তো এ নিয়ম অনুসরণ করা যাবে না। এটি বৈধ করার একটি অপচেষ্টা করা হচ্ছে। জাতির স্বার্থে ব্যবসায়ীদের এ বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে হবে।
এবারের গাড়িকাণ্ডে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় হলেও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে যে চাপ তৈরি হলো তা কাটিয়ে উঠতে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।