দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির বছর শুরু হয় বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়েই। সে সময় বিএনপি নেত্রী হাসপাতালে ছিলেন টানা ৮১ দিন।
এর পরেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় সার্চ কমিটি গঠনে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাবের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে একের পর এক সভা-সেমিনারে ব্যস্ত থাকে বিএনপি। নতুন নির্বাচন কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করে সরকার ও কমিশনের ওপর অনাস্থা জানিয়ে কুমিল্লা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সব নির্বাচন বর্জন করে দলটি।
মে মাসের দিকে সরকারবিরোধী সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে প্রথম দফায় সংলাপ করে তারা।
বছরের মাঝামাঝি জুন ও জুলাইয়ের দিকে নিত্যপণ্য এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এ সময় সংঘর্ষে ভোলায় দুই এবং নারায়ণগঞ্জে একজনসহ বেশ কয়েকজন দলীয় কর্মী নিহত হয়।
আগস্টের দিকে হার্টের গুরুতর জটিলতায় আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। পরানো হয় রিং। বেশ কিছু শারীরিক জটিলতায় আবারও কিছুদিন তাকে থাকতে হয় হাসপাতালে। তার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে সে সময় দেশব্যাপী বিক্ষোভও করে বিএনপি।
অক্টোবরে যুগপৎ আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে যুক্ত ও কর্মসূচির রূপরেখা চূড়ান্ত করতে ডান-বামসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। আন্দোলন-কর্মসূচির পাশাপাশি তৃণমূল থেকে মহানগর ও কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি দেয় বিএনপি।
এর মাঝেই সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী ঢাকাকে সাংগঠনিকভাবে দুই ভাগে ভাগ করে ১৬টি স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশে করে মহানগর বিএনপি। এ সময় মিরপুর ও হাজারীবাগে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়ায় দলটি।
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ, সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ নানা দাবিতে ঢাকাসহ ১০ বিভাগে গণসমাবশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। সরকার সমর্থিতদের হামলা, বাধা, পরিবহন ধর্মঘট উপেক্ষা করে কর্মসূচি শেষ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
বছরের শেষ দিকে ডিসেম্বর ছিল বিএনপির জন্য সবচেয়ে সংকটের মাস। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয় অস্থিরতা। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবশে করার অনঢ় অবস্থান নিয়ে টানটান উত্তেজনায় ৭ ডিসেম্বর দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। ব্যাপক সংঘর্ষের পর দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে পুলিশি অভিযান শেষে গ্রেফতার করা হয় দলটির সিনিয়র নেতাসহ প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে।
পরের দিন ৮ডিসেম্বর গভীর রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নয়াপল্টন ছেড়ে ১০ ডিসেম্বর পুলিশের দেখানো গোলাপবাগ মাঠেই ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করে বিএনপি। সেখান থেকে উপস্থাপন করা হয় ১০ দফা। একই সঙ্গে ঘোষিত হয় যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি।
সেই সমাবেশ থেকে বিএনপির ৭ এমপির পদত্যাগের ঘোষণার পরদিন ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা। এরপর বিএনপি মহাসচিবসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি ও দলীয় কার্যালয়ে অভিযানের প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করে দলটি।
২৪ ডিসেম্বর ঢাকা ও রংপুর ছাড়া সারা দেশে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এ সময় পঞ্চগড়ে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন কর্মী নিহতের দাবিও করে দলটি।
এর মাঝেই রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা দেয় বিএনপি। যেখানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা ও রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী পদে পরপর দুই মেয়াদের পর কেউই ক্ষমতায় থাকতে পারবে না উল্লেখ করে ২৭টি সংস্কারের প্রস্তাবনা দেয় দলটি; যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলে নানা আলোচনা।
বছরের একবারে শেষ প্রান্তে এসে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা ও রংপুরে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল করে বিএনপি ও সমমনা প্রায় ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল।