‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে চিঠি দিয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দলটির সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপালের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এ চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জায়গায় জায়গায় নিরাপত্তা ভঙ্গ হয়েছে। নিরাপত্তাবলয় ভেঙে বহু সাধারণ মানুষ রাহুলের কাছাকাছি চলে এসেছেন। বিশেষ করে দিল্লিতে ঢোকার পর নিরাপত্তা বলে কিছুই চোখে পড়েনি। দিল্লি পুলিশ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তারা নীরব দর্শক সেজে থেকেছে। অথচ রাহুল গান্ধী ‘জেড+’ নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রাখেন।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপাল বলেছেন, গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ভারত জোড়ো যাত্রা দিল্লিতে ঢোকার পর রাহুল গান্ধীর নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাধারণ কংগ্রেস কর্মী ও সহযাত্রীরা। তারাই রাহুলের চারপাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করেছিলেন। দিল্লি পুলিশ ছিল নিতান্তই দর্শক। হরিয়ানাতেও নেতাকর্মীরা ঝুঁকির মধ্যে পথ চলেছেন বলে জানিয়েছেন বেনুগোপাল।
হরিয়ানায় বিজেপি সরকারের অন্যতম শরিক দল। সেই রাজ্যে নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ে গুরুগ্রাম পুলিশের কাছে কংগ্রেস এক অভিযোগ জানিয়েছিল। চিঠির সঙ্গে বেনুগোপাল সেটিও জুড়ে দেন। অভিযোগে বলা হয়েছিল, অচেনা বহু মানুষ ও রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা যাত্রীদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত কনটেইনারগুলোতে ঢুকেছেন। কাউকে কিছু জানানো বা অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন পর্যন্ত তারা মনে করেননি।
কংগ্রেস ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দল এ যাত্রায় অংশ নিচ্ছে। অভিযোগ জানিয়েছে তারাও। বলেছে, গোয়েন্দারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। নানা কথা জানতে চাইছেন। জিজ্ঞাসা করছেন, কেন তারা যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।
চিঠিতে বেনুগোপাল লিখেছেন, দেশে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষা এ পদযাত্রার উদ্দেশ্য। সরকারের উচিত প্রতিহিংসাপরায়ণ না হওয়া। সব যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের কর্তব্য, বিশেষ করে যাত্রীরা যখন পাঞ্জাব হয়ে জম্মু-কাশ্মীরে যাবেন এবং শ্রীনগরে যাত্রা শেষ করবেন।
এদিকে কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ করে দেয়ার এক চক্রান্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ ও মিডিয়াকে সে জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু তারা ব্যর্থ হবে। তিনি বলেন, কোভিডের দোহাই দিয়ে জাতীয় স্বার্থে যাত্রা বন্ধের যে অনুরোধ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডবীয় কদিন আগে করেছেন, তা এ চক্রান্তেরই এক অঙ্গ।
২০২৪-এর লোকসভা ভোট সামনে রেখে গত ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে একটি সমাবেশের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন দলটির নেতারা।
৫ মাসে দীর্ঘ ৩ হাজার ৫৭০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ১২টি রাজ্য অতিক্রম করে এই লংমার্চ শেষ হবে সর্বোত্তরের রাজ্য কাশ্মীরের শ্রীনগরে গিয়ে। গত প্রায় চার মাসে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ ১০টি রাজ্য ছুয়েছে। সবশেষ গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) হরিয়ানা পেরিয়ে দিল্লি প্রবেশ করে এটি।
বর্ষ শেষের বিরতির পর আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ভারত জোড়ো যাত্রার শেষ পর্ব শুরু হবে। এ পর্বে রাহুলসহ যাত্রীরা হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ হয়ে পাঞ্জাবে ঢুকবেন, তারপর জম্মু হয়ে শ্রীনগর। শ্রীনগরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে যাত্রা। আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে এ যাত্রা শেষ হওয়ার কথা।