প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। উত্তরায় এই আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা দুইটার দিকে দিয়াবাড়ি (উত্তরা) স্টেশন থেকে মেট্রোরেল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী নিয়ে আগারগাঁওয়ের দিকে ছুটবে। প্রথম যাত্রার যাত্রী হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিসভার সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিরা।
সাধারণ যাত্রীরা মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে। উদ্বোধন হলেও মেট্রোরেল চলাচল করবে সীমিতভাবে। প্রাথমিক পরিকল্পনা হলো উত্তরা-আগারগাঁও পথে প্রথম তিন মাস মেট্রোরেল মাঝের কোনো স্টেশনে থামবে না।
আগামী ২৬ মার্চ থেকে উত্তরা-আগারগাঁও পথে পুরোদমে যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। এ পথের জন্য ৬ কোচবিশিষ্ট ১০টি ট্রেন প্রস্তুত করা হয়েছে। ১০ মিনিট পর পর ট্রেন যাত্রা শুরু করবে। দিনে চলবে ৪ ঘণ্টা—সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। প্রতিটি ট্রেন সর্বোচ্চ ২০০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে।
সপ্তাহে এক দিন মঙ্গলবার ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। অবশ্য টিকিট কাটা, ওঠানামা ও চলাচলে মানুষের অভ্যস্ততা তৈরি হলে ঘন ঘন ট্রেন চলবে, সব স্টেশনে থামবে এবং যাত্রীও বেশি নেওয়া হবে।
মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে গিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দেখা যায়, দুই প্রান্তে চারটি টিকিট কাউন্টার পুরোপুরি প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার থেকে এই কাউন্টারে কর্মীদের টাকা দিলে টিকিট অর্থাৎ র্যাপিড কার্ড পাওয়া যাবে। কার্ড ছোঁয়ালে খুলবে স্টেশনের তৃতীয় তলায় যাওয়ার পথ। সেখানে গিয়ে ট্রেনে চড়া যাবে।
মেট্রোরেলে ভ্রমণের জন্য দুই ধরনের টিকিট রাখা হয়েছে—১০ বছরের স্থায়ী কার্ড ও এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) কার্ড। স্থায়ী কার্ডের জন্য লাগবে ২০০ টাকা, যা নিরাপত্তা জামানত। এই কার্ডে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনমতো টাকা ভরতে (রিচার্জ) হবে। কেউ কার্ড ফেরত দিলে জামানত ফেরত পাবেন। হারিয়ে ফেললে টাকা দিয়ে নতুন করে কার্ড কিনতে হবে। এতে পুরোনো কার্ডে টাকা থাকলে তা অবশ্য নতুন কার্ডে যুক্ত হবে।
স্থায়ী কার্ড কেনার আগে নিবন্ধন করতে হবে। এর জন্য নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) লাগবে। পাসপোর্টের নম্বর হলেও চলবে। এসব তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যভান্ডারের সঙ্গে মিলতে হবে। নইলে কার্ড পাওয়া যাবে না। স্থায়ী কার্ড নিজের কাছেই থাকবে। একক যাত্রার কার্ড ভ্রমণ শেষে যন্ত্রের ভেতরে দিলে তবেই বের হওয়ার পথ খুলবে।
স্টেশনে টিকিট দিতে যেমন মেট্রোরেলের কর্মীরা থাকবেন, তেমনি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রও আছে। এতে টাকা দিলে একক যাত্রার টিকিট বের হয়ে আসবে।
ট্রেনের যাত্রীরা একদিকের দরজা দিয়ে উঠবেন এবং নামবেন অন্যদিক দিয়ে। শেষ স্টেশনে সব যাত্রীকে নেমে যেতে হবে। অর্থাৎ কেউ ট্রেনে অবস্থান করতে পারবেন না। নতুন করে কার্ড ছুঁইয়ে (পাঞ্চ করে) ট্রেনে উঠতে হবে। প্রতিটি স্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্মে দরজাযুক্ত বেড়া আছে। স্টেশনে এসে ট্রেনের দরজা বেড়ার দরজা বরাবর খুলে যাবে। এরপর যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে–নামতে পারবেন।
মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া ৬০ টাকা। স্থায়ী কার্ড কিনে যাতায়াত করলে ১০ শতাংশ ছাড় আছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে যাতায়াত করতে পারবেন। পঙ্গুদের জন্য ছাড় আছে ১৫ শতাংশ। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া বা হাফ পাসের ব্যবস্থা নেই, যেটা বাসে রয়েছে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, মেট্রোরেলে খরচের তুলনায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভাড়া কম ধরা হয়েছে। এরপরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ছাড় থাকছে না। তিনি জানান, কোনো পরিবারের সঙ্গে তিন ফুটের চেয়ে কম উচ্চতার শিশু থাকলে তার ভাড়া দিতে হবে না।