ইউক্রেন সংঘাত নিরসনে এক মাসের বেশি সময় ধরে ১০ দফা শান্তি প্রস্তাব বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে আসছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। চলতি বছরের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে প্রথম ১০ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি। এরপর গত সপ্তাহে (২২ ডিসেম্বর) জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে আবারও বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসে ভাষণের সময় বিষয়টি উল্লেখ করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠককালে তার কাছে ১০ দফা শান্তি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন তিনি। এরপর সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনালাপে এ বিষয়ে সাহায্য চান তিনি।
টুইটারে জেলেনস্কি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। জি-২০ জোটের সভাপতি হিসেবে দেশটির সাফল্য কামনা করেছি। আমি এ প্ল্যাটফর্মেই শান্তি পদ্ধতি ঘোষণা করেছিলাম। এখন আমি সেই শান্তি পদ্ধতি বাস্তবায়নে ভারতের অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছি।’
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির প্রথম সারির ২০টি দেশের জোট জি-২০। এই জোটের গত মাসের শীর্ষ সম্মেলনে যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের ১০ দফা শান্তি পদ্ধতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি। আগামী এক বছরের জন্য এ জোটের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছে ভারত।
প্রশ্ন হচ্ছে, জেলেনস্কির এ ১০ দফা শান্তি প্রস্তাবে কী আছে? আল-জাজিরার প্রতিবেদনমতে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের এই প্রস্তাবে জাপোরিঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে বিকিরণ ও পরমাণু নিরাপত্তা, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি এবং এরই মধ্যে রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডগুলো ফিরিয়ে দেয়ার মতো বিষয় দাবি আকারে তুলে ধরা হয়েছে। এতে আরও রয়েছে, রুশ সেনা প্রত্যাহার, পরিবেশ রক্ষা, সংঘাত নিয়ন্ত্রণ, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা।
জি-২০ সম্মেলনে বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের হাজার হাজার মানুষ রাশিয়ার হাতে বন্দি। তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। সবাই জানি ১১ হাজার শিশুকে জোর করে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ তবে জেলেনস্কির এই প্রস্তাব সেই নভেম্বরেই প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া। মস্কোর বক্তব্য, রুশ বাহিনী যেসব এলাকা দখল করেছে, তার এক ইঞ্চিও ফিরিয়ে দেবে না তারা।
গত রোববার বড়দিনে (২৫ ডিসেম্বর) এক বক্তব্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তবে পশ্চিমারা এতে সাড়া দেয়নি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছেন, এ লড়াইয়ে তারা হার মানবেন না। এরপর ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহরে বোমা ও রকেট হামলা বাড়িয়েছে রুশ বাহিনী।
ইউক্রেনের বন্দরনগরী খেরসনে গোলাবর্ষণের তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) থেকে হামলা জোরদার করা হয়েছে। তীব্র গোলাবর্ষণের মুখে শহর ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি ও আল-জাজিরা।
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত চলতি সপ্তাহে তিনশ দিন পার করেছে। এ সময়ে সম্মুখ যুদ্ধ বেড়েছে বই কমেনি। তবে কোনো পক্ষই উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি। এ মুহূর্তে লড়াই চলছে মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দোনেৎস্কের বাখমুত স্ভাতভ ও আরও উত্তরে লুহানস্ক প্রদেশে।