চব্বিশ ঘণ্টায় বেলারুশ প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে দু-দুবার বৈঠক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বেলারুশে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ‘ইসকান্দার’ মোতায়েনের পরই এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলারুশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বেলারুশিয়ান টেলিগ্রাফ এজেন্সি (বেলটা নিউজ হিসেবেও পরিচিত) জানিয়েছে, ‘দ্বিপাক্ষিক কিছু বিষয় চূড়ান্ত করতেই’ আলোচনায় বসেছিলেন দুই নেতা।
বেলারুশে ‘ইসকান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা’ ও ‘এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ মোতায়েন করেছে রাশিয়া। গত ২৫ ডিসেম্বর বেলারুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম ও ইসকান্দার ব্যালিস্টিক মিসাইল এখন তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত।
পরমাণু বোমা ও ড্রোন বহনে সক্ষম ইসকান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ৫০০ কিলোমিটার (৩০০ মাইল) পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তু আঘাত হানতে পারে। মিনস্ক থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আঘাত হানতে পারবে এই ক্ষেপণাস্ত্র। বেলারুশ জানিয়েছে, যে উদ্দেশ্যে মোতায়েন করা হয়েছে এগুলো তার জন্য পূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়েছে।
বেলটা নিউজের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনের পর পুতিন ও লুকাশেঙ্কোর মধ্যে সবশেষ বৈঠক হয় মঙ্গলবার সেন্ট পিটার্সবার্গের জাদুঘরে। তারা একসঙ্গে সকালের নাশতা করেন। এর আগের দিন সন্ধ্যায় মিনস্কে কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটসের (সিআইএস) অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনে আলোচনায় বসেন দুই নেতা।
বেলারুশ ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি যোগ দেয়নি। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জন্য তারা রুশ সেনাদের নিজেদের ভূমি ব্যবহার করতে দেয়। যুদ্ধের ঠিক আগে বেলারুশে দুই দেশের সেনারা একটি যৌথ সামরিক মহড়াও চালিয়েছিল।
রাশিয়া বেলারুশের ভূমি ব্যবহার করে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আবারও হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। এর মধ্যেই বেলারুশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পুতিন দুবার বৈঠক করলেন।
এদিকে ইউক্রেনের বন্দরনগরী খেরসনে গোলাবর্ষণের তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) থেকে হামলা জোরদার করা হয়েছে। তীব্র গোলাবর্ষণের মুখে শহর ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি ও আল-জাজিরা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই রাশিয়া খেরসন শহর দখল করে নেয়। আট মাস রাশিয়ার দখলে থাকার পর গত নভেম্বরে খেরসন পুনর্দখল করে কিয়েভের বাহিনী। মস্কো দখলমুক্ত করার পর খেরসন যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
সম্প্রতি কৃষ্ণ সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত একাধিক রুশ যুদ্ধজাহাজ প্রবেশ করে। এ নিয়ে সতর্ক করেছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এরপর গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে বড়দিনের প্রস্তুতির মাঝে খেরসন শহরের কেন্দ্রে বিমান হামলা চালায় রুশ বাহিনী। আচমকা হামলায় ওইদিন ১১ জনের মৃত্যু হয়।
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত চলতি সপ্তাহে তিনশ দিন পার করেছে। এ সময়ে সম্মুখ যুদ্ধ বেড়েছে বই কমেনি। তবে কোনো পক্ষই উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি। এ মুহূর্তে লড়াই চলছে মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দোনেৎস্কের বাখমুত স্ভাতভ ও আরও উত্তরে লুহানস্ক প্রদেশে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছেন, এ লড়াইয়ে তারা হার মানবেন না। বিশ্বের বহু রাষ্ট্র দুই দেশের সংকট নিরসনে একাট্টা। এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলছেন, ইউক্রেন নিয়ে তিনি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। চলতি সপ্তাহে নিজ দেশের একটি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।