Homeজেলালক্ষ্মীপুর উচ্চফলনশীল ধান চাষে কৃষক আগ্রহী, বিলুপ্তির পথে দেশী বিভিন্ন জাতের ধান

লক্ষ্মীপুর উচ্চফলনশীল ধান চাষে কৃষক আগ্রহী, বিলুপ্তির পথে দেশী বিভিন্ন জাতের ধান

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ।।
 
উচ্চফলনশীল ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলায় বৃহত্তর   লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রকৃতিবান্ধব ধানের জাতগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। এসব জাতের মধ্যে আউশ মৌসুমের রয়েছে বাউরস, কাসালত, চেংরি, মুরালী, দুমাই, বোরো মৌসুমে- খইয়াবোরো আর টেপিবোরো। আমন মৌসুমে আছে বালাম, লাটি সাইল,মাডিসা, বৈলাম দান, কনক তারা, বিয়ার ২১, বিয়ার২৯,পাইজাম,বি আর ১০, নাইজার সাইল,, কার্তিক সাইল, কালিজিরা,  লাটিয়াইল , মধুমালতি।  ও দুধ কলম, শাখের খরা, উল্লেখযোগ্য।
 
লক্ষ্মীপুর কমল নগর  উপজেলার তোরাবগঞ্জ এর  আলী   জানান  ‘বিদেশী প্রজাতির হাইব্রীড চাষে কৃষকদের অত্যধিক পরিশ্রম ছাড়াও সার, কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে যায়। হাইব্রীড চাষে পোকার আক্রমণও থাকে বেশি। তাছাড়া যে পরিমাণ সার, কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় ও শ্রম দিতে হয়, যদি দেশী উন্নত জাতের চাষাবাদে এই শ্রমঘাম ও পরিমাণমতো সার প্রয়োগ করা হয় তাহলেও অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব ছিল।’
 
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর সদর এবং রায়পুর উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় ধান চাষ হয়। ভাতের ধান ছাড়াও মুরির জন্য গিগজ ধান, ভূসিহারা, চিড়ার জন্য হলিধান, খইয়ের জন্য লোহাচূড়া এবং পোলাওর জন্য কালোজিরা আর শাক্কর খোরা ধানের চাষ হতো। এখন বৈচিত্র্যময় এসব ধানের চাষ হয় না। কৃষকদের নিকট এসব ধানের বীজও বিলুপ্ত হয়ে গেছে
 
লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে এক সময় সম্ভ্রান্ত কৃষকের উঠানে উঠানে শোভা পেতো ধান রাখা ‘গোলা ঘর’। সময়ের বিবর্তে এখন তা বিলুপ্তির পথে।
 
ধান চাষ করতে গ্রাম গঞ্জের কৃষকরা  আগ্রহ হারাচ্ছেন যে কারণ।  সময় পরির্বতনের পালাক্রমে গ্রাম বাংলার কৃষকের ঘরে ঘরে থাকা লাঙ্গল-জোয়াল, মই ও হালের গরু আজ বিলুপ্তির পথে। বর্তমান এই যান্ত্রিক যুগে পরিবর্তন কারণে অলস ভাবে দিন কাটাচ্ছেন কৃষকেরা নেই কৃষি কাজে মনোযোগ।  আর এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় অনেক  কৃষক কৃষি কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। প্রযুক্তির কল্যাণে কাঠের লাঙ্গলের জায়গায় এখন স্থান করে নিয়েছে ‘কলের লাঙ্গল’ তাই অনেক কৃষক ক্রয় ক্ষমতার বাইরে এইসব যন্ত্রাংশ সংগ্রহ  করা।
 
রামগঞ্জ উপজেলা বেশ কয়েকজন কৃষক এর সাথে  কথা বলে  জানা যায় কৃষকের বীজ কৃষকের হাতে নেই। বীজের পুরো  সরকারি কোম্পানী ওবহুজাতিক  কোম্পানীর নতুন নতুন নামের বীজের ওপর নির্ভরশীল কৃষক। এখন কৃষকরাই ধানের নাম জানে না। আগের বর্ণিল ধান এখন নেই। লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে শুধু গত ৫ বছরের ব্যবধানে মুরি, চিড়া, খই, পোলাও, বিরিয়ানী আর ফিন্নি ফায়েশের ন্যায়ের বৈচিত্র্যময় খাদ্য তৈরির অন্তত ১৮
জাতের বাহারি দেশীয় ধান পুরো বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
 
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন জানান, লক্ষ্মীপুর জেলায়  প্রতি বছর গড়ে আমন ৮২ হাজার, আউশ ২৮ হাজার এবং বরো ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়। আমনে বর্তমানে ৩-৪টি, আউশে ২-৩টি জাতের দেশীয় ধানের চাষ হয়। আবার শতকরা হারে আমন, আউশ, বরো ধানের প্রায় ৬০ ভাগের মতো উফশী, ৩০ ভাগের মতো হাইব্রিড এবং ১০ ভাগের মতো দেশীয় ধান চাষ হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, আমন, আউশে অনেকগুলো উফশীজাত থাকলেও মাত্র ৪-৫টি ধানই বেশি চাষ হয়। কৃষকরা এখন ধানের নাম জানে না বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর