ইউক্রেনের বন্দরনগরী খেরসনে গোলাবর্ষণের তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) থেকে হামলা জোরদার করা হয়েছে। তীব্র গোলাবর্ষণের মুখে শহর ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি ও আল-জাজিরা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই রাশিয়া খেরসন শহর দখল করে নেয়। আট মাস রাশিয়ার দখলে থাকার পর গত নভেম্বরে খেরসন পুনর্দখল করে কিয়েভ বাহিনী। মস্কো দখলমুক্ত করার পর খেরসনে যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
সম্প্রতি কৃষ্ণ সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত একাধিক রুশ যুদ্ধজাহাজ প্রবেশ করে। এ নিয়ে সতর্ক করেছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এরপর গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে বড়দিনের প্রস্তুতির মাঝে খেরসন শহরের কেন্দ্রে বিমান হামলা চালায় রুশ বাহিনী। আচমকা হামলায় ওইদিন ১১ জনের মৃত্যু হয়।
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত চলতি সপ্তাহে তিনশ দিন পার করেছে। এ সময়ে সম্মুখ যুদ্ধ বেড়েছে বই কমেনি। তবে কোনো পক্ষই উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি। এ মুহূর্তে লড়াই চলছে মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দোনেৎস্কের বাখমুত স্ভাতভ ও আরও উত্তরে লুহানস্ক প্রদেশে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছেন, এ লড়াইয়ে তারা হার মানবেন না। বিশ্বের বহু রাষ্ট্র দুই দেশের সংকট নিরসনে একাট্টা। এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলছেন, ইউক্রেন নিয়ে তিনি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। চলতি সপ্তাহে নিজ দেশের একটি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
আশঙ্কা করা হচ্ছিল, চলতি উৎসবের মৌসুমে খেরসনে আক্রমণ আরও জোরালো হতে পারে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। মঙ্গলবার খেরসনের বেশ কিছু এলাকা টার্গেট করে হামলা চালানো হয়। হামলার ব্যাপারে বুধবার সকালে এক টুইটবার্তায় ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী এমিনে ঝেপার বলেন, মঙ্গলবার থেকে এখন পর্যন্ত খেরসনের ৩৩টি বেসামরিক ভবনে অন্তত ৩৩টি রকেট ছুড়েছে রুশ বাহিনী।
হামলায় বেশ কিছু ভবন ও অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে খেরসনের একটি মাতৃসদন হাসপাতাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিকে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রুশ বাহিনী আরও ট্যাংক ও সামরিক যান মোতায়েন করেছে। রাশিয়ার তীব্র হামলার পাল্টা জবাব দেয়া হচ্ছে।
উভয় পক্ষের তীব্র লড়াইয়ের মুখে শত শত মানুষ খেরসন ত্যাগ করছে। তাদের সরে যেতে সহযোগিতা করছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। বিবিসির এক প্রতিবেদনমতে, গত কয়েক দিনে বহু মানুষ খেরসন ছেড়েছে এবং এখনও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে খেরসন ছেড়ে যাচ্ছে এমন একটি পরিবারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনমতে, মা-বাবার সঙ্গে ছেড়ে চলে যাচ্ছে ১৩ বছর বয়সী নিকা সেলিভানোভা। ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সময় ইন্না নামে তার এক বন্ধুকে দুই হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়। এ সময় এক হৃদয়বিদারক মুহূর্তের অবতারণা হয়। দুজনই অশ্রুসিক্ত। ছেড়ে যাওয়ার এমন কষ্ট হয়তো এর আগে কখনো অনুভব করেনি অবুঝ এ শিশুদুটি।
নিকার মা ইলেনা বলেন, ‘এর আগে রাশিয়া দিনে মাত্র ৭-১০ বার বোমা হামলা করত। এখন দিনে ৭০-৮০ বার বোমা হামলা করে, যা অসহনীয় মাত্রায় চলে গেছে।’ বড়দিনের পর নিকার পরিবারের মতো এভাবে খেরসন ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে হাজারো ইউক্রেনীয়। খেরসনের বিভিন্ন চেক পয়েন্টে গাড়ির লাইনে যানজট তৈরি হয়েছে।
কেউ খেরসন ছেড়ে ইউক্রেনের অন্য কোনো শহরে যাচ্ছেন, কেউবা দেশ ছেড়েই পালাচ্ছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর লাখো মানুষ পার্শ্ববর্তী পোল্যান্ড, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এর আগে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল খেরসনে বড়দিনের ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা।