ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে প্রায় এক মাস সাগরে ভাসার পর রোহিঙ্গাবাহী নৌকাটি অবশেষে ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে পৌঁছেছে। ওই নৌকায় ১৮০ জনের বেশি রোহিঙ্গা অভিবাসনপ্রত্যাশী আছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আচেহ প্রদেশের তীরে নামতে দেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।
দুই দিনে আচেহ প্রদেশের তীরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে পৌঁছানো দ্বিতীয় নৌকা এটি।
কাঠের তৈরি মাছ ধরার নৌকাটি রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ উপকূল থেকে রওনা করে। ছয় দিন পর এর ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। নৌকাটি তখন ভাসতে ভাসতে মালয়েশিয়ার জলসীমা থেকে ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে পৌঁছায়। এরপর এটি নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ে।
মানবাধিকারকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা হঠাৎ হঠাৎ ওই নৌকার যাত্রীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলেন। তাঁরা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে ভারতীয় ও ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি সহায়তার আবেদন জানান। নৌকার যাত্রীরা বলেছেন, তাঁরা না খেয়ে আছেন এবং অনেকে মারা গেছেন।
ভারতীয় নৌবাহিনী তখন তাদের কিছু পরিমাণে খাবার ও পানি সরবরাহ করে এবং নৌকাটিকে ইন্দোনেশিয়ায় ফেরত পাঠায়। ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে নৌকাটি আরও ছয় দিন ধরে ভাসার পর শেষ পর্যন্ত এটিকে তীরে ভিড়তে দেওয়া হয়। অর্থাৎ তারা যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, সেখান থেকে প্রায় ১২ শ মাইল দূরে নৌকাটি ভিড়েছে।
স্থানীয় এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, সরকারি একটি ভবনে ওই শরণার্থীদের অস্থায়ীভাবে রাখা হবে।
এর আগে গত রোববার ৫৭ জন আরোহী নিয়ে আরও একটি কাঠের নৌকা ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়া অবস্থায় আচেহ উপকূলে নোঙর করেছে। ওই নৌকাও এক মাস ধরে সাগরে ভেসেছে। আরোহীরা বলেছেন, তাঁরা ক্ষুধার্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, আরও একটি নৌকায় থাকা ১৮০ জন শরণার্থী সম্ভবত মারা গেছেন। সংস্থার মুখপাত্র বাবর বালুচ বলেছেন, ওই নৌকার আরোহীদের স্বজনেরা বলেছেন, নৌকাটিতে ফাটল ধরেছিল বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলেছে, শরণার্থীবোঝাই মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াগামী নৌকাগুলো নিয়ে তারা প্রায়ই সতর্ক করে আসছে। এসব শরণার্থী সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে অনাহারে থাকছে।
গত দুই মাসে এসব গন্তব্যের উদ্দেশে এমন পাঁচটি নৌকা যাত্রা করেছে।
দীর্ঘ সময় ধরেই নির্যাতন ও নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার ছাড়ছে রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালে সামরিক অভিযানে দেশটির রাখাইন রাজ্যে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। সে সময় প্রাণ বাঁচাতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ ছাড়া প্রতিবছরই অনেক রোহিঙ্গা ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে মিয়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যায়।