আরেকটি স্বপ্নের দুয়ার খোলার অপেক্ষা। বৈদ্যুতিক ট্রেনের জগতে বাংলাদেশ। মেট্রোরেলের আশীর্বাদে নিত্যদিনের যানজটের খড়গ থেকে মিলবে মুক্তি। এতে উচ্ছ্বসিত রাজধানীবাসী।
এদিকে মেট্রোরেল সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কয়েক মাস ধরে শুধু উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা নয়, প্রথম যাত্রীর গর্বিত অংশীদার হওয়ার প্রতীক্ষাও অনেকের। প্রতীক্ষার পালা একদমই শেষের দিকে। হাতে গুনে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। এরপরই বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে আনুষ্ঠানিক যাত্রা বাঙালির-বাংলাদেশের।
আর তাই মাহেন্দ্রক্ষণ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উচ্ছ্বাস, বাড়ছে আনন্দ। মেট্রোরেলের সাম্প্রতিক হুইসেল বার্তা দিচ্ছে নতুন এক পথের। নতুন এক দিগন্ত উন্মোচনের।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পর ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ মানুষের সুযোগ মিলবে মেট্রোযাত্রার। প্রথম যাত্রার গর্বিত অংশীদার হওয়ার অপেক্ষায় নগরবাসী।
স্বপ্নের মেট্রোরেল ১২০ মিনিট অর্থাৎ দুই ঘণ্টার যাত্রাপথ নিয়ে আসবে ২০ মিনিটে। যা মানুষের গতিশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণেও সুফল দেবে মেট্রোরেল।
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যানজটের নগরী ঢাকায় বাস কিংবা অন্য যানবাহনের চেয়ে এত দ্রুত যাতায়াত ঢাকাবাসীকে স্বস্তি দেবে। সেক্ষেত্রে পরিবর্তীত এক নগর জীবনের পথ দেখাচ্ছে বলেই মনে করেন তিনি। তার মতে, নজর দিতে হবে এর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ আর নির্ঝঞ্জাট টিকিট সার্ভিসের দিকে।
সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়ায় আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারবেন নগরবাসী।
প্রথম দিকে আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ি অংশের ১১.৭৩ কিলোমিটার পথে চলবে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল পথ নির্মাণকাজ ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। তবে আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশে রোকেয়া সরণিতে মেট্রোরেলের পিয়ার বসানোর খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয় পরের বছরের মাঝামাঝিতে।
গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সরকার। পরের বছর প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপোর মধ্যদিয়ে শুরু হয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায় কার্যক্রম। ধাপে ধাপে কাজ এগিয়েছে অগ্রাধিকারভিত্তিক এ প্রকল্পের; বাড়ানো হয়েছে এর রুটও।
রুট বাড়ানো ও ব্যয় বাড়ার আগে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল এগিয়ে নেয়ায় মোট ব্যয় বেড়ে হয় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।