মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ।।
লক্ষ্মীপুরের জনগনের কাছে এসপি আশরাফ জনপ্রিয় কর্মকর্তার তকমা অর্জন করেছেন। সুন্দর জেলা গড়তে আপ্রাণ প্রচেষ্টা এসপি মাহফুজ্জামানের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও যানজট মুক্ত একটি সুন্দর লক্ষ্মীপুর গড়তে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন লক্ষ্মীপুরে সদ্য যোগ দেয়া পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজ্জামান আশরাফ। তিনি গত ২৩ আগষ্ট ২০২২ইং লক্ষ্মীপুর জেলায় পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন এবং ঐ দিন থেকেই তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত ও সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবনযাপন সুনিশ্চিত এবং লক্ষ্মীপুর শহরে যানজট নিরসনে কাজ শুরু করেন।
লক্ষ্মীপুর যোগ দেয়ার পর দিন তিনি লক্ষ্মীপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে সাংবাদিকদের নিকট থেকে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক ও যানজট মুক্ত একটি সুন্দর লক্ষ্মীপুর গড়তে এবং জেলার আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়গুলো সাংবাদিকদের নিকট থেকে অবগত হন। একই ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, বণিক সমিতি, ইমাম-মোয়াজ্জেম সমিতি, শিক্ষক নেতৃবৃন্দ, হিন্দু, বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদসহ জেলার শতাধিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করেন।
সড়ক দূর্ঘটনা রোধ ও যানজট মুক্ত লক্ষ্মীপুর গড়তে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা সদরসহ জেলার প্রধান প্রধান সড়কে ধারাবাহিক পরিদর্শন শুরু করেন। কখনো সকাল, কখনো দুপুর, কখনো বিকাল আবার কখনো রাতে সড়ক পরিদর্শন করতে থাকেন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ডান পাশে যাত্রি উঠানামা বন্ধ করার পাশাপাশি ডানপাশে লোহার রড় দিয়ে বন্ধ করার নির্দেশ দেন। নির্দেশনা মেনে যেসব সিএনজি ও ইজিবাইক চালকরা ডানপাশ বন্ধ করেছেন তিনি তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এছাড়াও হেলমেট পরা বাইক চালকদেরকেও তিনি পথে পথে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। হেলমেট, কাগজপত্র ও নাম্বারবিহীন মোটর সাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ যোগদানের পর মতবিনিময় সভায় হোন্ডা চোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকলেই তাঁর নিকট দাবি জানান। তারই প্রেক্ষিতে তিনি হোন্ডা চোর চক্রকে সনাক্ত করতে প্রচেস্টা শুরু করেন। যার প্রেক্ষিতে জেলাব্যাপী পুলিশী অভিযান চালিয়ে হোন্ডা চোর চক্রের ২৫ সদস্যকে গ্রেফতার এবং কয়েকটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। সে অভিযান এখনো চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। যার প্রেক্ষিতে জেলায় মোটর সাইকেল চুরি বন্ধ রয়েছে। অব্যাহত পুলিশী অভিযানের কারণে গ্রেফতার এড়িয়ে হোন্ডা চোরেরা লক্ষ্মীপুর ছেড়ে পালিয়েছে। কোথাও কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তিনি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান এবং তাদেরকে আইনি সহায়তা প্রদান করেন। চুরির সংবাদ পেয়ে গভীর রাতেও তাঁকে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে চোরাই মালামাল উদ্ধারে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।
বর্তমান সময়ে লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী মাদক বিরোধী কঠোর অভিযান চলমান রয়েছে। অভিযানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। কেউ গ্রেফতার এড়াতে লক্ষ্মীপুর ছেড়ে পালিয়েছেন। এদিকে পুলিশ সুপারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজ্জামান আশরাফ প্রতিদিন জেলার কোন না কোন এলাকা চষে বেড়ান। এ সময় তিনি ওইসব এলাকার হাঁট-বাজার ও লোকালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের কুফল সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। এ সময় তিনি সর্বসাধারণের সাথে করমর্দন করেন। গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষ নিরহংকারী ও সদালাপি পুলিশ সুপারের সাথে করমর্দন করতে ভীড় জমান। পুলিশ সুপারের মার্জিত আচরণে মানুষ অভিভূত হন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশ সুপারের উত্তরোত্তর সাফল্য এবং সমৃদ্ধি কামনা করে পোস্ট করেন।
তিনি লক্ষ্মীপুর যোগদানের কয়েকদিনের মধ্যেই জেলার হাট বাজার ও বিভিন্ন জনপদ চষে বেড়াতে শুরু করেন। এ সময় তিনি মুচি, কর্মকার, নরসুন্দর, রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, ভিক্ষুক, ভিখারিনী, টং দোকানদার, ফুটপাতের চা দোকানীসহ সব শ্রেণি মানুষের সাথে কথা বলে এবং করমর্দন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে লক্ষ্মীপুরের মানুষ তাঁকে মানবিক পুলিশ সুপার হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রতিবন্ধী বা কোন বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধা কিংবা কোন অসুস্থ মানুষ আইনী সহায়তার জন্য পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি সিসি ক্যামেরা দেখে নিজেই অফিস থেকে নিচে নেমে আসেন। তিনি ধৈর্য সহকারে আগন্তুকদের কথা শোনেন এবং তাদেরকে আইনগত সহায়তা প্রদান করেন। পুলিশ সুপারের আন্তরিক সহায়তায় এরি মধ্যে অনেকেই তাদের চুরি হয়ে যাওয়া সোনা গহনা, মোবাইল ফোন, টাকা পয়সা এবং বসত ভিটা ফিরে পেয়েছেন।
তিনি লক্ষ্মীপুর যোগদানের পর থেকে প্রতি শুক্রবার লক্ষ্মীপুর চকবাজার মসজিদ, পুলিশ লাইন্স জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের পর সমাবেত মুসুল্লিদের উদ্দেশ্যে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক বক্তব্য রেখে চলেছেন। সব সময় মানুষের কাছাকাছি থাকায় তিনি অল্প সময়ের মধ্যে লক্ষ্মীপুরের শান্তিপ্রিয় মানুষদের প্রিয়জনে পরিণত হয়েছেন। অধিকাংশ মানুষ তাঁকে চেনে এবং তার নামও জেনে গেছেন। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ বিরোধী প্রচারণার জন্য গ্রামীণ জনপদে গেলে হাজারো মানুষ তাঁর সাথে সাক্ষাত করে করমর্দন করতে, ছবি তুলতে ছুটে আসেন। অনেকে আইনী সাহায়তাও চান। তিনি তাদেরকে আইনী সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের তাৎক্ষণিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
চলার পথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেন এবং শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন এবং সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেন। বহুমূখী প্রতিভাসম্পন্ন এ কর্মকর্তা কোরআনের আয়াত পাঠ করে বক্তব্য শুরু এবং সমাপ্ত করেন।
লক্ষ্মীপুরে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের জন্য রাষ্ট্রীয় বরাদ্দের সদ্বব্যবহার নিশ্চিত করতে সদা সচেষ্ট থাকেন। তিনি বার বার পুলিশ ম্যাচ পরিদর্শন এবং পুলিশ সদস্যদের সাথে পুলিশ লাইন্স ম্যাচের খাবার খেয়ে মান যাচাইয়ের পাশাপাশি রাত্রিকালীন রোল কল করে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করেন। তিনি দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের লালনে সদা তৎপর থাকেন। লক্ষ্মীপুর যোগদানের পর তিনি দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে জনগণকে দুর্নীতি ও হয়রানি মুক্ত সেবা প্রদানে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলেই তিনি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজ্জামান আশরাফের দুর্নীতি বিরোধী কঠোর মনোভাবের কারনে থানাগুলোতে সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
সার্বিক বিষয়ে নিয়ে পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, আমার বাবার আদর্শের পথ বেয়ে আমি জনগনের সেবক হয়ে কাজ করছি, শোষন নিপীড়ন জনগনের পাশে থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। আমার সহকর্মীরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখতে। সকলের সহযোগিতায় লক্ষ্মীপুর জেলা আদর্শ জেলায় পরিনত হবে।