রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পাল্টে গেছে বৈশ্বিক রাজনীতি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা জোটবদ্ধ হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও মস্কোর সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছে বেইজিং। এমনকি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে দুদেশের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে নাজুক হয়েছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মস্কোকে কোণঠাসা করতে উঠেপড়ে লাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো। দেয়া হয় একের পর এক নিষেধাজ্ঞাও। একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়াসহ জাতিসংঘে মস্কোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে রুশ মিত্রদেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানানো হয়। তবে শুরু থেকেই কৌশল অবলম্বন করে চীন। যুদ্ধ চায় না জানালেও মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটেনি বেইজিং। উল্টো ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ন্যাটো এবং পশ্চিমা দেশগুলোর দায় খুঁজেছে চীন।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে দৃঢ় হয়েছে মস্কো-বেইজিং সম্পর্ক। দুই দেশ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে এক হয়ে কাজ করছে বলেও জানান ওয়াং ই। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কও শক্তিশালী হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। দুই দেশ এখন নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন করছে। রাশিয়ার সঙ্গে ২০০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাশিয়ার সঙ্গে চীনের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িয়ে আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এত কিছুকে পাশ না কাটিয়ে দেশটির সঙ্গে সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আরও জোরদারের পথই বেছে নেয় চীন। এ ছাড়া মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বেইজিংকে কতটা চাপে ফেলবে, তা নিয়েও দ্বিধায় ছিল চীন। নিজেদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা ছাড়া চীনের কাছে আর কোনো পথ ছিল না বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হলেও ঠিক উল্টো চিত্র ওয়াশিংটনের ক্ষেত্রে। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নাজুক হয়েছে সম্পর্ক। ওয়াং ই জানান, দুই দেশের মধ্যে নানা বিষয়ে বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে, যা উভয় রাষ্ট্রের জন্য অকল্যাণকর। তবে মার্কিন প্রশাসন নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করলে চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক উন্নতি হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।