মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।।
মেঘনা নদীর উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে এবারও নারিকেলের বাম্পার ফলন হয়েছে। নারিকেল কেনা-বেচায় এখন দারুণ সরগরম লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন হাট-বাজার। চলতি মৌসুমে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে শত শত কোটি টাকার বেশী নারকেল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। প্রতি জোড়া নারিকেল ১২০/১৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
তবে স্থানীয়ভাবে নারিকেল ভিত্তিক কল-কারখানা গড়ে না উঠায় ও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে নায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন চাষীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় দুই হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে নারিকেল বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৫শ’ ১০ হেক্টর, কমলনগর ৩৫০হেক্টর, রায়পুর ৩৬৫ হেক্টর ও রামগতি উপজেলায় ১৬০হেক্টর জমিতে নারিকেলের বাগান রয়েছে। এ মৌসুমে সাড়ে ৫ কোটি কোটি পিছেরও বেশী নারিকেল বিক্রি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে যার বাজার দর শত কোটির টাকার বেশী। এছাড়াও দশ কোটি টাকার নারিকেলের ছোবড়া বিক্রি হবে বলে আশা করে হচ্ছে।
জেলায় নারিকেলের প্রধান মোকামগুলো হলো- সদর উপজেলার দালাল বাজার, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ, রামগঞ্জ শহর, কমলনগর হাজির হাট, রামগতির আলেকজান্ডার। এসব বাজারে এখন কেনা-বেচায় ব্যস্ত সময় পার করছে নারিকেলের পাইকারসহ মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। এখানকার নারকেল বাগেরহাট, ভৈরব, খাদেমগঞ্জ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
হায়দারগঞ্জ এর রাখি মাল ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, নারিকেলের চারা গাছ রোপণের সময় প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করতে হয়। গাছ লাগানোর পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতি বর্ষা মৌসুমে গাছের মাথা পরিস্কার করতে হয়। প্রতিটি গাছ ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। প্রতি গাছে বছরে ২০০ থেকে ৫০০টি পর্যন্ত নারিকেল পাওয়া যায়।
চন্দ্রগঞ্জ বাজারের নারিকেলের পাইকার কামাল হোসেন জানান, তিনি এ মৌসুমে হাজার পিচ নারিকেল ১৪ থেকে ১৮হাজার টাকা দরে এ পর্যন্ত এক কোটি টাকার নারিকেল কিনেছেন। এগুলো কয়েকটি জেলায় পাঠানো হয়েছে। তার মোকামে দশজন শ্রমিক নারিকেল ছোবড়া তোলার কাজ করছেন। এবাজারে তার মতো আরও ৪ জন পাইকার রয়েছেন। বর্তমানে মৌসুমের শুরু। তবে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর নারিকেলের দাম বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নারিকেল শ্রমিক আনোয়ার হোসেন জানান, প্রায় ত্রিশ বছর যাবত তিনি নারিকেলের ছোবড়া তোলার কাজ করছেন। এক হাজার নারকেল ছোবড়া তুললে ৫শ’ থেকে ৮শ’ টাকা পান। দৈনিক তিনি এক থেকে দেড় হাজার নারিকেলের ছোবড়া তুলতে পারেন।
রায়পুর উপজেলা কৃষি অফিসার তহমিনা খাতুন বলেন , এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ডাবের ফলন ভালো হওয়ায় ও তীব্র পরিমাণ গরম পড়ায় ডাব কাটা হয়েছে বেশী। তবে ডাবের কারনে নারিকেলের বাম্পার ফলন কম হয়েছে । নারিকেল সমৃদ্ধ এ জেলায় নারিকেল ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে চাষীরা নায্য দাম পাওয়ার পাশাপাশি বিপুল মানুষের কর্মসস্থান হবে। সেজন্য এ জেলায় নারিকেল ভিত্তিক কারখানা গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ভিয়েতানাম এর নারিকেলের প্রতি আগ্রহের কারনে চাষীরা ঝুঁকছে সেদিকে। বড় গাছের চেয়ে ছোট গাছের ফলনের প্রতি নজর বেশী তাদের। আমরাও চাহিদামতো সরবারহের চেস্টা করছি। এছাড়াও নারিকেলের ছোবড়া অত্যান্ত চাহিদাসম্পন্ন তাই গোডাউন, ফ্যাক্টরি গড়ে তোলার বিকল্প নেই।