লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের সেই ভয়াল ২৪ ডিসেম্বর আজ। ওই রাতে ঝালকাঠির মাঝ নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে বীভৎসভাবে পুড়ে ও নদীতে ডুবে শিশু-নারী বৃদ্ধসহ ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ হয় অসংখ্য মানুষ।
২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান ১০ লঞ্চটি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর অতিক্রম করছিল। জেলা শহরের দক্ষিণ পাড়ের দিয়াকুল গ্রামে পৌঁছালে পুরো লঞ্চে আগুন লেগে যায়। নদীতে ভাসতে ভাসতে আগুনে পুড়ে শিশু-নারী পুরুষসহ লঞ্চের ৪৯ জনের প্রাণহানি হয়। দগ্ধদের অনেকে প্রাণ রক্ষায় নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অনেক মরদেহ ১০ দিন ধরে ঝালকাঠির নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন অনেকে। আহতদের অনেকে আজও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। আগুনে বীভৎস হওয়ায় ২৫ জনের মরদেহ প্রথমে শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে ২৪ জনের বিকৃত মরদেহ ঝালকাঠি ও বরগুনায় বেওয়ারিশ কবরস্থানে দাফন করা হয়।
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় লঞ্চ মালিক হামজালালসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ঝালকাঠি সদর থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, অজ্ঞাত ২৪ জনের মরদেহের ডিএন পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে ১৬ জনের মরদেহ শনাক্ত হয়েছে। বাকি ৮ জন শনাক্ত হলেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।
আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিকে আদালতের নির্দেশে মালিকপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমানে মামলা দুটি নৌ আদালতে বিচারাধীন।
এদিকে অগ্নিদগ্ধদের উদ্ধার, তাদের আশ্রয় ও সেবা দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত রাখেন ঝালকাঠির লোকজন। বিশেষ করে দিয়াকুলের সাধারণ গ্রামবাসী। লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে অনেকের প্রাণ বাঁচান তারা। সেদিনের সেই ভেজা কাপড় আজও দিয়াকুল গ্রামে ভয়াল স্মৃতি হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে। আর সেই রাতের কথা স্মরণ করে আজও শিউরে ওঠে ঝালকাঠির মানুষ।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের নৌ ফায়ার স্টেশন না থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে এত প্রাণহানি ঘটেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। ওই ঘটনার এক বছরেও ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের নৌ স্টেশন স্থাপন হয়নি। এ বিষয়ে ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার শফিকুল ইসলাম জানান, নৌ ফায়ার স্টেশন নির্মাণে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।