মালয়েশিয়ায় প্রবল বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ার ৬ রাজ্যে বন্যা সতর্কতা জারি করেছে দেশটির সরকার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে মালয়েশিয়ার বন্যা পূর্বাভাস কর্তৃপক্ষ এক নোটিশে জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টি বা উল্লেখযোগ্য বজ্রপাত হলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মালয়েশিয়ার জোহর, পাহাং, পেরাক, সেলাঙ্গর, তেরেঙ্গানু এবং সাবাহ রাজ্যে আকস্মিক বন্যা হতে পারে।
মালয়েশিয়ার ড্রেনেজ অ্যান্ড ইরিগেশন ডিপার্টমেন্টের (ডিআইডি) ন্যাশনাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (পিআরএবিএন) বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বাসিন্দাদের, বিশেষ করে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যারা আছেন, তাদের কর্তৃপক্ষ বা বন্যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে এবং ৭০ হাজারেরও বেশি লোককে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দেশটির তেরেঙ্গানু এবং কেলান্তান রাজ্যকে প্রভাবিত করে সৃষ্ট বৃষ্টি বর্তমানে জোহর প্রদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং রাজ্যের বাসিন্দারা বন্যার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
এদিকে তেরেঙ্গানুতে রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সচিবালয় জানিয়েছে, তেরেঙ্গানু ও কেলান্তান রাজ্যে ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে বন্যাদুর্গতদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বন্যাদুর্গতদের সংখ্যা মধ্যরাতে ৩৬ হাজার ৯ জন থেকে বেড়ে বৃহস্পতিবার সকালে ৩৬ হাজার ২৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। কেলান্তান রাজ্যে এ সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, তবে এখনও ৩০ হাজারেরও বেশি লোক বন্যা সতর্কতার মধ্যে রয়েছে।
দেশটির বার্তা সংস্থা বার্নামা জানায়, কেলান্তান রাজ্যে ৩১ হাজারেরও বেশি লোক ঘরবাড়ি ছেড়েছেন এবং সপ্তাহান্তে বন্যা শুরু হওয়ার পরে ৩৯ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাকে পার্শ্ববর্তী রাজ্য তেরেঙ্গানুর অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) কেলান্তান রাজ্যে ৪ জন মারা যান। এর মধ্যে ৩ বোন বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন এবং ১৫ মাস বয়সী এক শিশু পানিতে ডুবে যায়। সবশেষ পঞ্চম মৃত্যুটি ছিল তেরেঙ্গানুতে প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়া দুই বছরের একটি মেয়ে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় জোহর রাজ্যের কোতা তিঙ্গি, মুয়ার এবং মার্সিং, পাহাং রাজ্যের কুয়ানতান, মারান এবং পেকান, পেরাক রাজ্যের বাগান দাতুক এবং হিলির পেরাক, সেলাঙ্গর রাজ্যের ক্লাং জেলা, তেরেঙ্গানু রাজ্যের মারাং এবং কুয়ালা তেরেঙ্গানু ও সাবাহ রাজ্যের তুরান এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। দেশটির আবহাওয়া দফতর এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তার সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং উদ্ধার প্রচেষ্টার জন্য অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ করবে। সরকার প্রাথমিকভাবে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাকে ৪০০ মিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত বরাদ্দ দিয়েছে।
মালয়েশিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত অতিবর্ষার কারণে প্রতি বছরই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।