বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে গত ১০ বছরে ৯২টি মামলা হওয়া কেবল অস্বাভাবিক নয়, নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।
সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটায় পুলিশ মির্জা ফখরুল ইসলামকে বাসা থেকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে। ডিবির কর্মকর্তারা প্রথমে বলেছিলেন, ৭ ডিসেম্বর বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ১০ ডিসেম্বরে বিএনপির জনসভার স্থান (তখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মির্জা ফখরুল ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য তঁার বিরুদ্ধে সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তাঁকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
জয়নুল আবেদীন, মির্জা ফখরুলের আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি
তঁাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, পুলিশের পক্ষ থেকে এমন কোনো দাবি করা হয়নি। কিন্তু ওই দিন বিকেলে জানানো হয়, ৭ ডিসেম্বরের নাশকতায় উসকানি দেওয়ায় মহাসচিবসহ বিএনপির দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এরপর সিএমএম আদালত ও মহানগর আদালতে তিন দফা তাঁদের জামিন আবেদন নাকচ হয়।
আইনজীবী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে গত ১০ বছরে ৯২টি মামলা হয়েছে। এর কারণে প্রতি মাসেই তাঁকে মামলার হাজিরা দিতে ঢাকার আদালতে যেতে হয়। সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর ঢাকার আদালতে দুটি মামলায় হাজিরা দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে তিনি কারাগারে গেছেন অন্তত পাঁচবার। ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫০ দিনের মতো জেল খেটেছেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিবের বিরুদ্ধে যে ৯২টি মামলা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এখন সচল ২০ থেকে ২৫টি। বাকি মামলার বেশির ভাগ উচ্চ আদালতের আদেশে বিচার কার্যক্রম স্থগিত আছে। কয়েকটি মামলায় তিনি আদালতের আদেশে অব্যাহতিও পেয়েছেন। সর্বশেষ নাশকতার অভিযোগে হাতিরঝিল থানায় করা একটি মামলায় অব্যাহতি পান মির্জা ফখরুল; যেটি ‘গায়েবি মামলা’ হিসেবে পরিচিত। যে ঘটনা ঘটেনি, সেই ঘটনার কথা বলে যে মামলা দেওয়া হয়, সেটিই গায়েবি মামলা হিসেবে পরিচিত।
মির্জা ফখরুলের আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য তঁার বিরুদ্ধে সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তাঁকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরের আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবুর দাবি, পল্টনের নাশকতার ঘটনাটি দৃশ্যমান।
বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের এজাহারভুক্ত আসামি আমানউল্লাহ আমানসহ বেশ কয়েকজন জামিন পেয়েছেন। অন্যদিকে এজাহারে মির্জা ফখরুলের নাম না থাকা সত্ত্বেও তিনবার তাঁর জামিনের আবেদন বাতিল হয়ে যায়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি জামিন পাওয়ার অধিকারী।
মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, মাননীয় আদালতই বিচার করবেন—এসব ঘটনার সঙ্গে আদৌ তিনি জড়িত ছিলেন কি না। পুলিশ সর্বশেষ যে মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে, সেই মামলায় তাঁর জামিনের বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে। প্রথমত, তিনি একজন বয়স্ক ব্যক্তি, তিনি কখনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, এ রকম প্রমাণ নেই।
তিনি কেবল একটি বড় রাজনৈতিক দলের মহাসচিব নন, একজন সজ্জন রাজনীতিক হিসেবেও পরিচিত। মামলায় তাঁর জামিন হলে বিচারকাজ বিঘ্নিত হবে বলে পিপি যে যুক্তি দেখিয়েছেন, তা একেবারে অগ্রহণযোগ্য।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে আগের সব মামলায় তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়ে আসছেন গ্রেপ্তারের আগপর্যন্ত।
একজন প্রবীণ রাজনীতিক জামিন বঞ্চিত হলে জনমনে এই ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হবে যে রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যেই এই মামলা করা হয়েছে।