আমিনুর রহমান খোকন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি।।
নওগাঁর মহাদেবপুরে অবৈধ হাট বসিয়ে হাটুরেদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গত ১৮ বছর ধরে এই অবস্থা চললেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এই অবৈধ হাট বন্ধে কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) উপজেলার হাতুড় ইউনিয়নের গাহলী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের দক্ষিণে মহাদেবপুর-সরাইগাছী পাকা সড়কের উপর ও রাস্তার পাশে বিশাল জায়গা জুড়ে বসানো হয়েছে ধানের হাট। এখানে মহাদেবপুরের বিভিন্ন অটোবয়লারের কর্মচারীরা ধান কিনছেন। মাঠের মধ্যেই রাখা হয়েছে উঁচু উঁচু ধানের ঢিঁবি। শ’য়ে শ’য়ে বস্তায় সেসব কেনা ধান ভরে সারি সারি ট্রাকযোগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের একজন জানালেন, সপ্তাহে রোববার ও বৃহস্পতিবার দুদিন এখানে হাট বসে।
ধান কেনার জন্য হাট কমিটির নিয়োগ করা আদায়কারীকে খাজনা দিতে হয়। কয়েকজন হাটুরে জানালেন, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে এখানে হাট লাগানো হচ্ছে। আগে শুধুমাত্র চাল-ডাল, মাছ-মাংশ, তরি-তরকারী আর তৈজসপত্র বেচাকেনা হতো। গত কয়েক বছর ধরে বিশাল এলাকায় চলছে ধান কেনাবেচা। এই হাটের মাত্র দুই কিলোমিটার পূর্বেই রয়েছে ছাতুনতলী হাট। এই হাটের ইজারাদার রাহেনুল হক লুসা অভিযোগ করেলেন, তিনি এবছর সরকারী কোষাগারে ১৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়ে হাটটি ইজারা নিয়েছেন।
গাহলী বাজারে অবৈধ হাট লাগানোর ফলে ছাতুনতলী হাটে ক্রেতা বিক্রেতা কম আসছে। এতে যেমন সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি তারও ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধ হাটটি বন্ধ করার জন্য তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানান। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান জানান, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এবিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এটির সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য হাতুড় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৮ ডিসেম্বর বিষয়টির তদন্তে সহযোগিতার জন্য উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার জিল্লুর রহমানও ঘটনাস্থলে যান।
তিনি জানান, হাটটি অবৈধ। সরকার এখান থেকে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এই হাট লাগানোর ফলে ছাতুনতলী হাটের ইজারাদার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জানতে চাইলে হাতুড় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, গাহলী হাট কমিটি হাটের নামে জমি লিখে দিয়েছেন। জেলা সায়রাত মহল ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন না নিয়ে হাটটি অবৈধভাবে লাগানো হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তার উত্তর দিতে চাননি। তিনি রিপোর্ট দিলে ইউএনও’র কাছ থেকে তা জেনে নেয়ার পরামর্শ দেন। গাহলী হাট কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান জানান, সায়রাত মহল ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি।
তবে হাটের জন্য জমি দান করা হয়েছে। হাটটি অবৈধ জেনেও এলাকার স্বার্থে সব মহলকে ম্যানেজ করে এটি চালানো হচ্ছে। হাট থেকে আদায় করা খাজনার টাকা দিয়ে হাটের উন্নয়ন করা হয়। এখান থেকে আদায় হওয়া টাকা আত্মসাত করা হয়না বলেও তিনি দাবী করেন। সরকার প্রতিবছর মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবার বিষয়ে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি। এই হাট লাগানোর ফলে ছাতুনতলী হাটের ইজারাদার ক্ষতিগ্রস্ত হবার বিষয়েও তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।