রাজধানী ঢাকা আবারও বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ২০ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ২৫৯ নিয়ে বাতাসের মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় রয়েছে।
ভারতের কলকাতা ও দিল্লি যথাক্রমে ২৩২ ও ২২৫ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার পরবর্তী দুটি স্থান দখল করেছে।
২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোর ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয় এবং ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোর ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের জন্য কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে তা জানায়।
বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)।
মেগাসিটি ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে বায়ুদূষণে। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো: ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা।
বর্তমানে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে, নির্মাণকাজ, রাস্তার ধুলা ও অন্যান্য উৎস থেকে দূষিত কণার ব্যাপক নিঃসরণের কারণে ঢাকা শহরের বাতাসের গুণমান দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার সম্প্রতি সময় সংবাদকে বলেন, শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় বাতাসে ধুলার পরিমাণ বাড়ে। সে ক্ষেত্রে নির্মাণ প্রকল্প আর যানবাহনের ধোঁয়াই এটি বাড়ার প্রধান কারণ।
তিনি আরও বলেন, যে মানমাত্রা রয়েছে পরিবেশ অধিদফতর থেকে সেটি হলো ৬৫ মাইক্রোগ্রাম; তার প্রায় তিনগুণের বেশি রয়েছে ঢাকা শহরের বায়ুমানে ধুলো। ঢাকা শহরের এ রকম একটি কেন্দ্রে (বেইলি রোড) আমরা এ পরিস্থিতি লক্ষ্য করছি। যেখানে নির্মাণকাজ এবং ইটের ভাটা রয়েছে সেখানে দূষণের মাত্রা দ্বিগুণ। মূলত চলতি মাসেই রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েছে দ্বিগুণ।
এ মৌসুমে বৃষ্টি না থাকায় পুরো সময়টাতেই থাকতে হয় কুয়াশা আর ধুলার মিশেল ধোঁয়াশায়, জানান তিনি।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বড় বড় মেগাপ্রজেক্ট থেকে শুরু করে আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে ভবনগুলো তৈরি হচ্ছে বা রাস্তায় যে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে; সব জায়গাতে দেখা যাবে, কোথাও কোনো আচ্ছাদন নেই, পুরো কাজ হচ্ছে উন্মুক্তভাবে। সরকারকে অবশ্যই এটা স্বাস্থ্যঝুঁকি মনে করে ধুলা দূষণটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর যারা মনিটরিংয়ের দায়িত্বে আছেন, তাদেরও জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।