যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি আঘাত হেনেছিল অনেক আগেই। এবার তার সঙ্গে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে চিকিৎসা সংকট। হাসপাতালগুলোতে সেবাগ্রহীতাদের লাইন লম্বা থেকে লম্বা হচ্ছে, কিন্তু সেবা মিলছে দেরিতে। ঘাটতি দেখা দিয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহে।
বাড়ছে ঠান্ডার সংক্রমণ। সব মিলিয়ে যুক্তরাজ্যে এখন যেন অসুস্থ হওয়াই বিপদ। দীর্ঘ কোভিডের পর মানুষ স্বাভাবিকভাবেই শ্রান্ত, অবসাদগ্রস্ত। এরই মধ্যে ঠান্ডার প্রকোপ আঘাত হেনেছে যুক্তরাজ্যে।
আর মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে অনেক আগেই। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির নার্সদের ওপর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় তিন বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড আক্রান্তদের সেবা দিয়ে গেছেন দেশটির নার্সরা। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের কোভিড তাদের মানসিক স্বাস্থ্য দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে দিয়েছে। এই অবসাদে কোভিড শেষ হওয়ার পর প্রায় ৪০ হাজার নার্স পদত্যাগ করেছেন। বাকিরাও বলছেন তারা যে পরিমাণ আয় করেন, মূল্যস্ফীতির কারণে তা দিয়ে জীবনধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস(এনএইচএস) দেশটির সবচেয়ে বড় নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ এনএইচএসের অধীন চাকরি করেন। যুক্তরাজ্য সরকারের এই বিভাগটির বাজেটও ব্যাপক।
সব মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২২ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। তবে এত বড় বাজেট নিয়েও তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোভিড-১৯-এর দীর্ঘ ধকল, মূল্যস্ফীতি, নতুন করে ঠান্ডার সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অভাব মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে দেশটির স্বাস্থ্যখাতে। হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসাসেবা দেন সেসব ডাক্তার তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারছেন না সাধারণ রোগীরা। কারণ, তাদের কাছেও প্রয়োজনীয় ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক নেই। সব মিলিয়ে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যখাত।
দেশটির বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ ও ছায়া সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রেটিং বলেন, ‘বর্তমানে এনএইচএস ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকটের মধ্যে রয়েছে।’ স্ট্রেটিং জানিয়েছেন, জরুরি অবস্থায়ও মানুষ হাসপাতালে সেবা নিতে পারছে না। এমনকি সাধারণ চিকিৎসকদের সেবাও পাচ্ছেন না। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তাও নেই। স্বাস্থ্যখাতে সংকট, মূল্যস্ফীতি যখন চরমে, তখন দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি শীতে বাড়তে পারে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন সংক্রমণ।
বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বাড়তে পারে ব্যাপক হারে। স্ট্রেপটোকক্কাস অ্যাগাল্যাকটিয়া নামে একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বাড়তে পারে এমন লক্ষণ এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে। এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি শিশু। ফলে শীতে যদি এই ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ দেখা দেয় এবং যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি, অ্যান্টিবায়োটিকের অভাব এবং স্বাস্থ্যখাতের এমন দীনতা চলতে থাকে, তবে তা মোটেও ভালো কোনো খবর বয়ে আনবে না।